এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৩

এক বিকেলে ললনা’র পিছে…

এক বিকেলে ললনা’র পিছে…

নিয়মিত কলেজে যাওয়া-আসা করলেই যে ভালো ছাত্র হওয়া যায় না, আমিই তার বাস্তব উদাহরণ! পড়ালেখায় ততটা ভালো না হলেও কোনো দিন কলেজে যাওয়া মিস করিনি। শুক্রবার এমনকি যেকোনো সরকারি ছুটির দিনেও আমি কলেজ প্রাঙ্গনে উপস্থিত থাকতাম! এর মানে এই নয় যে, স্যারদের লেকচার বা বন্ধুদের কাছ থেকে নোট সংগ্রহ করার জন্য কলেজে যেতাম। মূলত ভাব মারার জন্যই প্রতিদিন একবার হলেও কলেজ পাড়ায় উঁকি দিয়ে আসতাম! তো রোজকার মত একদিন শুক্রবারেও কলেজে গেলাম। গিয়ে দেখলাম কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। আর তাই কলেজে না ঢুকতে পেরে কলেজের পাশে ফুটপাতের এক দোকান থেকে চা খেয়ে সেখান থেকেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেদিনের আবহাওয়া ছিল অনেকটা মেঘলা টাইপের। আর তাই বাসার দিকে অল্প কিছু পথ পাড়ি দিতে না দিতেই দুর্যোগের ঘনঘটার সম্মুখীন হলাম। অর্থাৎ মেঘ না চাইলেও তখন বৃষ্টির এসে হাজির। অবশ্য এর জন্য আমাকে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি। কারণ আমার কলেজ ব্যাগে বই-খাতার কোনো চিহ্ন না থাকলেও সবসময়ই একটা ছাতা উপস্থিত থাকত। কাজেই মেঘের আভাস পাওয়ার সাথে সাথে ছাতাটা আগেই মাথার ওপর তুলে ধরলাম। অতঃপর ছাতা মাথায় কয়েক পা সামনে যেতে না যেতেই এক রোমান্টিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পেলাম! দেখলাম আমার সামনে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এক তরুনী হেঁটে যাচ্ছে। মেয়েটির চেহারা সামনাসামনি না দেখলেও সে যে বিরাট সুন্দরীই হবে এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কারণ তার গায়ের লাল রঙের ফতুয়া, মাথার দিঘল কালো কেশ, কানের দুল, হাতের বালা আর বৃষ্টি ভেজা শরীর দেখেই মেয়েটির সৌন্দর্য অনুমান করা যাচ্ছিল। আবার দেখলাম হাঁটার সুবিধার্থে মেয়েটি তার পায়ের জুতা গুলো খুলে হাতে নিয়ে নিজের কোমড় দুলাতে দুলাতে হাঁটছে। যা আমার চোখে শুধু সুন্দরই নয়, বহুত অপূর্ব লাগছে! এখন ঠিক করলাম, যে করেই হোক আমাকে ওই মেয়ের চেহারাটা একবার দেখতেই হবে। তো কথা না বাড়িয়ে আমি দ্রুত মেয়েটির পিছে পিছে হাঁটা ধরলাম। কিন্তু একি! মেয়েরা যে এত জোরে হাঁটতে পারে তা আমার জানা ছিল না। (আর জানা থাকবেই বা কী করে? পূর্বে কোনো দিন এভাবে কোনো মেয়ের পিছু নেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই কিনা!) এরপর আস্তে আস্তে উপলদ্ধি করতে লাগলাম, আমি এক পা এগুলেই মেয়েটি আমাকে দুই পা পেছনে ফেলে আগে চলে যাচ্ছে! এ দিকে ভেজা পায়ে দ্রুত হাঁটার কারণে আমার পা বার বার স্লিপ কাটছে। যার ফলে উপায় না দেখে আমিও মেয়েটির মত নিজের জুতাগুলো পা থেকে খুলে হাতে নিয়ে নিলাম। এরপর জুতাগুলো বগলতলে নিয়ে আবারো মেয়ের পেছনে হাঁটা ধরলাম। কিন্তু হায়…! খালি পায়ে যখন দুই কদম সামনে গেলাম তখন মনে হচ্ছিল আমি বুঝি সীতার অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছি! সেদিনই প্রথম আমার পা মাটিতে পড়েছিল। এখন আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি ভীষণ অহংকারী টাইপের একজন মানুষ! এ কারণেই বোধহয় আজকের আগে কোনো দিন আমার পা মাটিতে পড়েনি, তাই না? আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। ছোটবেলা থেকেই আমার ভীষণ স্যান্ডেল পরার অভ্যাস ছিল। আর এ কারণেই আমার পা আজীবন স্যান্ডেলের ওপরই পড়েছে। এজন্যই বললাম, আমার পা আগে কখনো মাটিতে পড়েনি!
যাই হোক, পিচঢালা রাস্তায় নিজের পা পড়তেই ব্যথায় গরম হয়ে আমার পা দুটি লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বুঝি ফোসকা পড়ে যাবে পায়ে। উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই বগলের তল থেকে নামিয়ে জুতাগুলো আবার পায়ে পড়ে নিলাম। এরপর যথারীতি হাঁটা শুরু করলাম মেয়েটির পিছু পিছু। প্রায় মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর দূর থেকে দেখলাম মেয়েটি রাস্তার পাশে ফুটপাতের এক চায়ে দোকানে ঢুকল। ভাবলাম বৃষ্টিতে ভিজে মেয়েটির শরীর হয়তো ড্যামেজ… মানে ঠান্ডা হয়ে গেছে তাই বোধহয় সে শরীরটা একটু চাঙা করার জন্য চা খেতে দোকানে ঢুকেছে। আর তাই দেরি না করে আমিও দ্রুত মেয়ের পেছন পেছন দোকানে ঢুকে গেলাম। কিন্তু এবারও আমি চেহারা না দেখে কেবল মেয়ের পেছন সাইডটাই দেখার সুযোগ পেলাম। সে আমাকে পেছন ফেলে দোকানদারের সাথে কথা বলছে। আর এ দিকে আমি এক নজরে তাকিয়ে আছি মেয়ের দিকে সে দোকান থেকে কী কিনছে এটা দেখার জন্য এবং মনে মনে অপেক্ষা করছি মেয়েটি দোকানদারের কাছ থেকে ঘুরে কখন পেছন ফিরে আমার দিকে তাকাবে এর জন্য। আমি অবাক হলাম তখন যখন দেখলাম মেয়েটি টাকা দিয়ে দোকানদারের কাছ থেকে দুটি বেনসন সিগারেট কিনল!
সে যাই হোক, মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিলাম যে, ‘আধুনিক মেয়ে তো তাই তাদের ৯৯% ভালো শুধু ১% খারাপ আরকি’! আর তার ১% খারাপটাই হলো এই সিগারেট খাওয়া। মনে হয় ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান অধিকার কায়েম করার জন্যই আজকালকের মেয়েরা সিগারেট খায়! তো আমি এসব ভাবতে ভাবতে দেখলাম মেয়েটি দোকানদারের কাছ থেকে সিগারেট কেনা শেষ করে পেছন দিকে অর্থাৎ, আমার দিকে ফিরল। দীর্ঘ সময়ের প্রতিক্ষার পর অবশেষে আমি তার চেহারা মোবারক প্রদর্শনের সুযোগ পেলাম! কিন্তু একি! চেহারা দেখে যে আমি পুরাই টাশকি খেয়ে গেলাম!! যতটা শক্‌ আমি ওনার সিগারেট খাওয়ার কথা শুনে খেয়েছিলাম তারচেয়ে হাই ভোল্টেজের শক্‌টা মনে হয় এখনই খেলাম।
ভাবছেন মেয়েটির চেহারা বেশ ভয়ঙ্কর ছিল, তাই না? আরে না, ব্যপারটা আসলে সেরকম কিছু নয়।
হয়েছে কী…
মেয়ে ভেবে আমি এতক্ষণ যার পিছু নিতে নিতে এ পর্যন্ত আসলাম সে তো আসলে কোনো মেয়েই নয়! চেহারা দেখে বুঝলাম, মেয়ের বেশে ইনি আসলে ২০-২২ বছরের একজন ফ্যাশনেবল যুবক!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন