এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৩

এখন শুধু ভাবী!


দানীং আমার কী যে হলো কিছুই বুঝতে পারি না। খেতে, বসতে, শুতে এমনকি ঘুমাতে পর্যন্ত ইচ্ছে করে না। ভাগ্যিস পোশাক পরিধানের সময় এমন অনীহা হয় না। হলে যে কী বিব্রতকর অবস্থায় পড়তাম তা আল্লাহ মালুম! তো আমার এই অনীহাপ্রীতির মূল কারণ যে প্রেম, ইহা বোধ করি আজকালকের ফিডার খাওয়া পোলাপানও অনুমান করতে পারে। আর যদি কেউ ইহা অনুমান করিতে ব্যর্থ হয়, তবে সে হচ্ছে আমার ক্লাসমেট প্রিয়া! অবশ্য তার অনুমান না করার পেছনে যথেষ্ট কারণও বিদ্যমান ছিল। কোথায় যেন শুনেছিলাম- ‘একটি মেয়ে যখন প্রেমে পড়ে তখন তার প্রেমে পড়ার বিষয়টি একমাত্র সেই মেয়েটি ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। অথচ একটি ছেলে যখন নাকি কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে তখন দুনিয়ার সবাই বিষয়টি জেনে যায়, শুধু জানতে পারে না ওই মেয়েটি!’ যেহেতু আমি ছেলেদের ক্যাটাগরিতেই পড়ি, তাই আমার বেলাতেও এর কোনো ব্যাতিক্রম হয়নি। অর্থ্যাৎ, দুনিয়ার সবাই জানত আমি প্রিয়াকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার ক্লাসমেট প্রিয়া কখনো এটি জানতে বা বুঝতে পারেনি। আর এভাবেই লুকোচুরির মাধ্যমে কোনো রকমে ঠেলেঠুলে চলছিল আমাদের… থুক্কু! আমার প্রেম।
প্রিয়া আমার ভালোবাসার কথা না জানলেও তার সাথে আমার বন্ধুটা কিন্তু বেশ ভালোই ছিল। আর তাই তো প্রেমের টানেই হোক কিংবা হোক বন্ধুত্বের টানে সে কলেজের পাশাপাশি রেগুলার আমাদের বাসায়ও যাতায়াত করত। এমনকি আমি বাসায় না থাকলেও নাকি প্রিয়া এসে আমাদের বাসার সামনে উঁকি-ঝুঁকি মেরে যেত। তার এরকম উঁকি-ঝুঁকি মারার কারণটাকে আমি অবশ্য পড়ালেখার প্রতি ভীষণ দুর্বলতা এবং আমার প্রতি প্রবল আগ্রহ আছে বলে মনে করতাম! আর তাই তো সব সময় নানান কায়দায় প্রিয়াকে শুধু হেল্প করার সুযোগ খুঁজতাম। কিন্তু বিরক্ত হতাম তখন যখন প্রিয়ার মুখে আমার চেয়ে আমার বড় ভাইয়ের বেশি প্রশংসা শুনতাম। আমার ক্লাসমেট আমাকে ছেড়ে কেন আমার বড় ভাইয়ের প্রশংসা বেশি করবে এটাই বুঝে উঠতে পারতাম না।
যাই হোক- প্রিয়াকে না জানিয়ে তার সাথে লুকোচুরি প্রেম তো অনেক করলাম, এবার আর না। যে করেই তাকে আমি প্রপোজ করে ছাড়বই। এখন কিভাবে কী করা যায় তা নিয়ে চিন্তায় বসলাম। চিন্তা করতে করতে কখন যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে কাছে চলে আসলো তার কোনো টেরই পেলাম না। ভাবলাম এই তো সুযোগ! এবারের ভ্যালেন্টাইনেই না হয় প্রিয়াকে নিজের মনের কথা জানাব। কিন্তু যেই ভাবা সেই মোতাবেক কাজ আর করা হলো না। অর্থ্যাৎ মনের মাঝে সাহসের ঘাটতি থাকায় ভ্যালেন্টাইনের দিন প্রিয়াকে প্রপোজ করার ভাবনাটাকে আর বাস্তবে রূপ দেওয়া গেল না।
এ দিকে এই ভ্যালেন্টাইনের দিনে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমার এক বন্ধুর জন্মদিন পড়ে গেল। সারা জীবন দেখে আসলাম, যে দিন যার জন্মদিন হয় সে দিন সে তার বন্ধুবান্ধব আর আত্বীয়স্বজনদের নিজের বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়ায়। কিন্তু আমার বেলায় হলো তার ঠিক উল্টো! অর্থ্যাৎ জন্মদিনের দিন সেই বন্ধুটি নিজেই এসে আমাকে ধরল এদিন তাকে ভালো কোনো হোটেলে নিয়ে কিছু খাওয়ানোর জন্য! আমি অবশ্য প্রথমে তার অনুরোধ থেকে বাইন মাছের মতোন মোচর দিয়ে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না। কারণ এখানেও আমার ভাগ্য আমাকে সহায়তা করেনি। অতএব তাকে হোটেলে নিয়ে খাওয়ানো বাদে আর কোনো গতি নেই। বিকেলে সেই বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলাম শহরের এক নামহীন চাইনিজ হোটেলে! খাওয়া-দাওয়া শেষে নিজের পকেট থেকে কোরবান করলাম নগদ ৪৮০ টাকা। এরপর তাকে বিদায় জানানোর পর হোটেল থেকে বের হতে গিয়ে দেখলাম সেখানের এক কোনার টেবিলে মোটামুটি বড় ধরনের আয়োজন করে খাবার সাজিয়ে বসে আছে আমার ক্লাসমেট ওরফে মনের মানুষ প্রিয়া! দেখে বেশ অবাক হলেও কিছুই বলার ছিল না। আস্তে আস্তে তার টেবিলের সামনে যেতেই সেও আমাকে দেখে তাৎক্ষণিক অবাক হওয়ার ভান করল। কুশল বিনিময়ের পর আমি তার টেবিলের বিপরীত দিকের চেয়ারটায় বসতে চাইলে সে আপত্তি জানিয়ে বলল, জায়গাটা নাকি অন্য একজনের জন্য রিজার্ভ করা আছে। আমি বললাম, কে সেই একজন? জবাবে প্রিয়া জানায় তার ভালোবাসার মানুষ! এই কথা শুনে আমার মাথার তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আরো ১০৮ ডিগ্রি বেড়ে গেল। মনে মনে বললাম, শালা তুই যেই হোস না ক্যান আজ তোকে আমি দেখেই ছাড়ব। (এখানে তাকে শুধু দেখে নেওয়ার কথা বলেছি। কোনো কিছু করার কথা কিন্তু আর আমি বলিনি। কারণ, আমার মাঝে আবার সাহসের মাত্রাতিরিক্ত অভাব আছে কিনা!)
দেখতে দেখতেই চলে আসলো প্রিয়ার সেই ভালোবাসার মানুষ। তো যাকে দেখার জন্য আমি এতক্ষন মনে মনে বাঘের মত গর্জে উঠেছিলাম, সেই তাকে দেখার পর যেন পুরো ভেজা বিলাই হয়ে গেলাম! আর বিলাই না হয়েই বা কী করার আছে? কারণ প্রিয়ার ভালোবাসার মানুষ আর অন্য কেউ নয়, তিনি সাক্ষাৎ আমারই আপন বড় ভাই! এখন যেই ভাইয়ার সামনে ঠিকমতো দাঁড়িয়ে কথা বলতে ভয় পাই সেই ভাইয়ার সামনে তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের বলে দাবি করার মত ততটা সাহসী মানব আমি নই! আর তাই তো তাকে পাশ কাটিয়ে কোনো রকমে হোটেল থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু লাভ হলো না। ভাইয়া আমাকে দেখে ফেললেন প্রিয়ার সাথে কথা বলা অবস্থায়। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, এখানে কেন এসেছিস? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম, এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল তাই সে আমাকে খাওয়ানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছে। খাওয়া শেষে দেখলাম প্রিয়া এখানে বসে আছে। তাই তার সাথে কথা বলছিলাম। ভাইয়া বললেন, প্রিয়াকে তুই চিনিস? বললাম, হুম… আমরা একই ক্লাসে পড়ি। এরপর ভাইয়া বললেন, ঠিক আছে এখন বাসায় চলে যা। আর শোন, আমি যে প্রিয়ার সাথে হোটেলে খাবার খেতে এসেছি এটা কিন্তু বাসায় কাউকে বলিস না। আমি বললাম- জি আচ্ছা, বলব না। এরপর ভাইয়াকে বললাম, ঠিক আছে আমি তাহলে এখন যাই। ভাইয়া বললেন, আচছা যা।
এ দিকে আমাদের দুই ভাইয়ের কথাবার্তা গুলো পেছনের টেবিল থেকে সব শুনছিল প্রিয়া। তাই বিদায়ের আগে প্রিয়াকে বললাম, প্রিয়া এখন তাহলে আমি আসি। তারপর রাজ্যের তামাম দুঃখগুলোকে নিজের কাঁধে নিয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য সামনের দিকে অগ্রসর হলাম। যেই না এক পা সামনে বাড়ালাম অমনি প্রিয়া পেছন থেকে ডেকে আমাকে বলল, বুঝলি সুমন… সব যেহেতু জেনেই গেছিস তো আজ থেকে আমাকে আর প্রিয়া ডাকার কী দরকার? এখন থেকে আমি শুধুই তোর ভাবী!!
প্রথম প্রকাশ : দৈনিক নয়াদিগন্ত, ১ মার্চ ২০১২

বুধবার, ১ মে, ২০১৩

একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প।

একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প। না পড়লে মিস
করবেন কিন্তু......
অয়ন মা বাবার একমাত্র ছেলে, ঢাবিতে চান্স
পেয়েছে তাই খালার বাসায় উঠেছে । খালার
ছেলে নেই মেয়ে আছে একটা আসার সময়
শুনে এসেছে, মেয়েটা যে কলেজে উঠেছে সেটা জানেনা সে ।
সব
সময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত অয়ন তাই
প্রেম নামক শব্দটা তার
আশেপাশে আসেনি কিন্তু
নীরাকে দেখে তার চোখে যেন দুনিয়ার সব চাইতে গুরুত্ব পূর্ণ জিনিসটা যে প্রেম
সেটা মনে পরে গেল মানে লাভ এট ফার্স্ট
সাইট
যাকে বলে। ভার্সিটি তে প্রথম
পড়া শোনা তাই
একটু কমিয়ে দিল অয়ন। সারাদিন খালার বাসায়
বসে থাকে নীরাকে দেখার আশায়।
এদিকে নীরার
কোন বিকার নেই
কলেজে আসছে যাচ্ছে দেখা হলে কথাবার্তা বল
এই টাইপ এভাবে প্রায় তিন মাস কেটে গেল নীরা কথাবার্তা সামান্য বাড়ালেও অয়ন
সাহস
পাচ্ছেনা তাকে কিছু বলার
পাছে যদি খালাকে বলে দেই তাহলে সব শেষ ।
একদিন ভাগ্য সু প্রসন্য হল তার, নীরার
সাথে কি একটা কাজে থাকে বাইরে যেতে বলে খালা। এক রিকশাতে পাশাপাশি সে আর নীরা,
ভাবতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল অয়নের
আসলে সে অপেক্ষা করতে করতে এতই অস্থির
হয়ে উঠেছিল যে ছোট এই জিনিসটা ও
থাকে আনন্দ দিচ্ছে।
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সে রিকশাতে মূর্তি হয়ে শব্দটি মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
অবশেষে নীরাই মুখ
খুলল।
-অয়ন ভাই, কি ব্যাপার আপনি এমন জবুথবু
হয়ে আছেন কেন?
-না, এমনি!! -শরীর খারাপ?? বাসায় চলে যাবেন??
-না না শরীর খারাপ হতে যাবে কেন?(এবার
ঠিক
হয়ে বসল সে পাছে না আবার
নীরা সত্যি সত্যি তার
শরীর খারাপ মনে করে) -তাহলে নিশ্চয় মন খারাপ আপনার!!!
-হুমম, তা বলা যাই।
-মানে, আপনার সত্যিই মন খারাপ!!!
আমি জানি!!!!
-আসলে নীরা আমার একটা কথা বলার ছিল!!
-কাকে??? -না, মানে!! কাউকে না!!
-আচ্ছা আপনি যে একটা ভীতুর ডিম
সেটা আপনি জানেন??
-না, মানে তোমাকে আমার একটা কথা বলার
ছিল!!!!
-বলতে হবে না আমি জানি!!!!!!!! নীরার ফর্সা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে উঠছিল,
অয়ন
আর কোন কথা বাড়ায় নি আস্তে করে নীরার হাত
ধরল সে। সামান্য কেঁপে উঠল নীরা, চোখ
দিয়ে পানি পরছিল তার...........................
নীরার বাবার অফিসে বসে আছে অয়ন। কি কারনে জানি তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন
অয়নকে।
অয়নের চোখে এখন খালি আগামীর চিন্তা,
নীরাকে নিয়ে নীরা ভার্সিটি ভর্তি হবে এবা
সে পাশ করে ভাল জব
করবে নীরাকে নিয়ে সুন্দর আগামি গড়বে............।।
-অয়ন, বাবা তোমার জন্য একটা চাকরির খবর
এনেছি আমি। বেতন ভাল , থাকার জন্য
বাসা দেবে তোমাকে তোমার পড়া শোনার ও
কোন অসুবিধা হবে না,
বাবা তোমাকে একটা কথা বলব??? -জি, বলেন খালু!!
-ক্যারিয়ার সবার আগে, বাকিটা পরে জীবন
এখনো অনেক বাকি।
-জি, খালু আমি চাকরিটা করব।
-কালকে থেকে জয়েন ডেট।
-আচ্ছা, আমি কালকে থেকে যাব। খালুর কথার ইঙ্গিতটা ধরে ফেলেছে অয়ন তাই
চাকরিটা করবে বলে দিয়েছে সে ।
উনি যা করছেন
হয়তবা ভালর জন্য করেছেন
এটা ভেবে সে বেরিয়ে পরল। আজকেই কাপড়
চোপর গুছিয়ে খালার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে সে
নীরা কাঁদছে তার রুমে একা একা, অয়ন এসেছিল
কাপড় চোপড় ,বই পত্র নিয়ে যেতে ওর
রুমে ঢুকেই
অবাক হয়ে গিয়েছিল সে তারপর সব শুনে পাথর,
যতক্ষন অয়ন ছিল সে অয়নের দিকে তাকিয়ে ছিল
সে যেন আর দেখবেনা তাকে। অয়ন চলে যেতেই
মার
কাছে গেল সে
- মা অয়ন ভাই চলে গেল কেন?
-সে একটা চাকরি পেয়েছে, তোর বাবা চাকরিটা ধরিয়ে দিয়েছেন।
-চাকরিটা কি উনার খুব দরকার ছিল???
-সেটা তোর বাবা ভাল জানেন!! আমার
কাছে এসব
বলতে আসবি না, তোর বাবার থেকে জিজ্ঞেস
করে নিস। মেয়ের সাথে এই প্রথম রাগ দেখালেন
তিনি।
নীরার মনটা একেবারে ভেঙ্গে গেল।
রুমে কাঁদতে কাঁদতে পুরনো দিন গুলোর
কথা মনে পরে গেল তার ।অয়ন
ভার্সিটি থেকে কখন আসবে সে অপেক্ষায় থাকত সে কখনো বের হত
একসাথে এইখানে ওইখানে বেড়াতে যাওয়া খুন
বড্ড মনে পরছে তার । অয়নের সাথে যেদিন
প্রথম
রিকশায় করে গিয়ে ছিল সেদিন
রাতে ছাদে একসাথে বসে ছিল দুজনে । নীরা আর
অয়ন ছাদে বসে ছিল একটু দূর
করে পাছে খালা এসে পরেন এই ভেবে, নীরার
কাছে চাঁদের আলোয় অয়নকে যেন কোন মায়াময়
যুবকের মত লাগছিল যাকে সে হাজার বছর
ধরে খুজেছিল। কেন জানি লাগছিল তার জন্যই অয়নের ঢাকা আসা তাদের পরিছয় যেন কোন
অমোঘ নিয়মে বাঁধা ছিল। অয়নকে তার অবশ্য
প্রথম দেখাতেই ভাল লাগেনি কেমন যেন
বোকা বোকা টাইপ কিন্তু
দেখতে দেখতে সে কেমন
করে যেন সপ্নের রাজপুত্র হয়ে যাই তার কাছে।
যাকে সে আপন করে পাবেই অয়নটার
হাবভাবে বেশ
বুঝা যেত তাকে সে পাগলের মত
ভালবাসে কিন্তু
নীরা পাত্তা না দেওয়ার ভাণ করত আসলে ওকে খুঁচিয়ে বের করতে চেয়েছিল
সে কিন্তু
বেচারা ভীতুর ডিমটা সেটা কখনই
পারবেনা বলে একদিন মাকে বলে সে অয়ন
ভাইকে নিয়ে বের হয় মা খুশি মনেই
অয়নকে ডেকে দিয়েছিল। আবার ডুকরে কাদতেঁ লাগল
সে..................।।
বাবা কয়েকদিন ধরে ফোন করছেন বারবার
বলছেন
একটা ভাল দেখে স্যট বানাতে অফিসের
ব্যস্ততায় একদম সময় করতে পারছে না।আজকে ফোন করার
পর সে বাবাকে বলতেই বাবা বললেন সময় নেই
চারদিন পর নীরার এঙ্গেজমেন্ট তুই থাকবি।
বলেই
বাবা কেটে দিলেন!
অয়নের মাথায় যেন বজ্রপাত হল । চার বছর ধরে যার
জন্য এত পরিশ্রম করছে চারদিন পর তার
এঙ্গেজমেন্ট!!!!!!! এখন আর কিছুই করার
নেই!!!!!
নিয়তি তাকে নিয়ে এত বড়
একটা খেলা খেলবে সে তা বুঝতেই পারেনি। সব
হারানোর শোক থাকে চারপাশ
থেকে ঘিরে ধরল ,
কিন্তু মনকে শক্ত করল সে ভাবল আমার কিছুই
করার নেই আর আজ আমি এক পরাজিত .........
নীরাদের বাসায় তার আগের রুমটাতে বসে আছে সে,
তার মা বাবা আসবেন
এটা তারা আগে জানাননি।
যাইহোক মেহমান নেই তেমন একটা , আর
মনে হয়
বর আসেনি এখনো মাথা ধরেছে বলতেই খালা তার
আগের রুমে গিয়ে শুতে বলল।
এসে শুইনি সে বসে আছে আর বিষাদের
সমুদ্রে সাতার কাটছে কতক্ষন ছিল
বলতে পারবেনা শুধু দরজা খোলার আওয়াজ
পেয়ে মাথা তুলল যা দেখল তার মাথায় আরেকবার
বজ্রপাত হল, নীরা সামনে দাঁড়ানো। নীরার
চোখে বিস্ময় সে টের পাওয়ার আগেই
দেখে নীরা তার বুকে । এই মেয়ে করে কি?
তার মান
ইজ্জত আজ ধুলোয় মিটবে। বিহিত করতে হবে থাকে একটা
-নীরা!!!! কি ব্যাপার?? তুমি এখানে কেন???
-কেন?? আমার
আসতে মানা আছে নাকি(কান্না আর আনন্দ
মিশ্রিত কন্ঠ নীরার) খটকা লাগল অয়নের
-খালা,খালু আছেন আমার বাবা মা ও দেখলে কেলেংকারি হয়ে যাবে !!!!!!!!!
-মা পাঠিয়েছেন আমাকে এখানে!!!!!
-কেন?????
-বললেন, যা তোর বর আগে অয়ন যে রুমে থাকত
সে রুমে আছে...।
অয়ন এবার বুক থেকে তুলে নিয়ে চোখের সামনে দাড়া করাল নীরাকে , যেন আকাশ
থেকে পরি নেমে এসেছে। বিয়ের সাজে অসম্ভব
সুন্দর লাগছে তাকে
-এগুলো আমার জন্য সাজোনি তুমি????
( দুস্টুমি হাসি অয়নের মুখে)
-না, আমার বরের জন্য সেজেছিলাম। কোন ভীতুর
ডিমের জন্য না।(নীরার চোখে কপট রাগ)
-তাহলে আমি দেখব না তোমাকে!!
(অন্যদিকে ফিরে গেল অয়ন)
-না দেখলে আমার বয়েই গেছে( হাসিটা কোন
মতে চাপাল নীরা)
.
.
.
.
 নাহিদ

আমি তোমাকে কোনোদিন দেখিনি কিন্তু মনেরভিতরে তোমার একটা ছবি একে ফেলেছিলাম।

আমি তোমাকে কোনোদিন দেখিনি কিন্তু মনের
ভিতরে তোমার একটা ছবি একে ফেলেছিলাম।
আমার ভালবাসার মানুষ যতই থাকুক না কেন
যেদিন তোমাকে আমার সামনে পাবো ঠিক সেই
মুহূর্ত থেকে তুমিই হবে আমার সবচেয়ে আদরের।
আমি না দেখেই সত্যি তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি কারন
আমি জানি তুমি হবে ঠিক তোমার বাবার মত।
মটু,গুল্লু... :')
অনেক আদর আদর...ঠিক যেন একটা আদরের
বস্তা!!!
তো কি হয়েছে তোমার কোন অস্তিত্ব নেই। তুমিই তো আমার স্বপ্ন।
তোমাকে আর তোমার বাবা কে নিয়ে আমি অনেক
স্বপ্ন সাজিয়েছি বাচ্চা।
আমার একটা বাচ্চা না।
দুই দুইটা বাচ্চা।
একটা বড় বাচ্চা,যাকে তুমি বাবা বলে ডাকবে আর আমার
ছোট্ট বাচ্চা হলে তুমি।
দুই জন কে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিব।
মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারাবো।
অনেক স্বপ্ন আমার তোমাকে নিয়ে।
তো কি হয়েছে যে তোমার কোন অস্তিত্ব নেই। তোমাকে যখন আমি আমার ভিতরে অনুভব
করি তখন তোমার বাবার মুখটা আমার
সামনে ভেসে উঠে।
তোমাকে যখন
গুটি গুটি পায়ে হাটতে দেখবো তোমার বাবার
ছেলে বেলা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। সব কিছুর মাঝে আমি তোমার
বাবা কে খুঁজে ফিরি কেন জানো?
কারন আমি আমার হৃদয় টা উজার করে তোমার
বাবা কে ভালবাসি।
আর তোমাকে নিয়ে আমি শুধু স্বপ্ন সাজাই।
জানি,তোমার কোন অস্তিত্ব নেই। কি হয়েছে তাতে?
বাচ্চা...তুমি কি জানো কেন তোমার কোন
অস্তিত্ব নেই?
জানো না...
শোনো তাহলে...কারন তোমার কোন বাবা নেই।
কেন তোমার বাবা নেই জানো? কারন তোমার মা এর ভাগ্যে তোমার বাবা ছিল
না।
তোমার মা আর বাবার কোন দিন বিয়ে হয়নি।
তারা শুধু একজন আর একজন কে ভালোবাসতো।
এক সময় তোমার বাবা নামক মানুসটা তোমার
মা কে ছেড়ে চলে যায় তাই তোমার অস্তিত্ব কোনদিন আমি আমার ভেতর অনুভব
করতে পারিনি।
শুধু স্বপ্ন দেখেছিলাম একটা সুন্দর জীবনের।
যা কোনদিন পূরণ হবার ছিল না।
কিন্তু তুমি সারাজীবন বেচে থাকবে আমার
ভালবাসায়। আমার হৃদয়ে।
আমার অস্তিত্বে...
.
.
.
.
 নাহিদ

অনেক দিন আগের কথা । একটা নদীরপাড়ে একটা অনেক বড় আপেল গাছ ছিল ।একটা ছোট্ট ছেলে প্রতিদিন গাছটারকাছে যেতো এবং গাছটারকাছাকাছি খেলতে পছন্দ করতো ।

অনেক দিন আগের কথা । একটা নদীর
পাড়ে একটা অনেক বড় আপেল গাছ ছিল ।
একটা ছোট্ট ছেলে প্রতিদিন গাছটার
কাছে যেতো এবং গাছটার
কাছাকাছি খেলতে পছন্দ করতো ।
সে গাছে চরতো , আপেল খেতো । এবং ক্লান্ত হয়ে গেলে গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পরতো ।
সে গাছটাকে ভালবাসাতো । আর
গাছটা ভালবাসতো ছেলেটার সাথে খেলতে ।
সময় গড়িয়ে চলল . . . . . ছোট্ট ছেলেটা বড়
হতে লাগলো , এবং তখন সে আর আগের
মতো প্রতিদিন গাছটার চারিদিকে খেলতে যেতো না । একদিন
ছেলেটা গাছটার কাছে আসলো । তার মন খুব
খারাপ ছিলো । গাছটা ছেলেটাকে বলল
"আসো। আমার সাথে খেলো ।" ছেলেটা জবাব
দিলো "আমি আর ছোট্ট বাচ্চা না । আমি এখন
কোন গাছের সাথে খেলি না । আমার এখন খেলনা দরকার । এবং খেলনাকিনার জন্য
দরকার টাকা ।" গাছটা বলল "দুঃখিত ।
আমার কাছে তো টাকা নেই । কিন্তু
তুমি আমার আপেল গুলো নিতে পারো ।
এগুলো বেচে তুমি টাকা পেয়ে যাবে ।"
ছেলেটা গাছের কথা শুনে উত্তেজিতো হয়ে উঠলো । সেগাছের
সব আপেল পেড়ে নিল।
এবং খুশি মনে ফিরে গেলো । ছেলেটা আপেল
গুলো পেড়ে নেবার পর আর ফিরে আসলো না ।
গাছটার মন খারাপ হয়ে গেলো । একদিন
ছেলেটা আবার গাছটার কাছে ফিরে আসলো উত্তেজিতো ভঙ্গিতে ।
গাছটা ছেলেটাকে বলল "আসো। আমার
সাথে খেলো ।" ছেলেটা বলল "আমার খেলার
সময় নেই । আমাকে আমার পরিবারের জন্য
কাজ করতে হবে । আমার এখন বসবাসের জন্য
একটা ঘর লাগবে । তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে ?" গাছটা জবাব
দিলো "দুঃখিত। আমি তো তোমাকে ঘর
দিতে পারবো না । কিন্তু তুমি আমার
ডালগুলো কেটে ঘর বানাতে পারো ।"
ছেলেটা গাছটার সব ডাল
কেটে নিলো এবং খুশি মনে চলে গেলো । গাছটা ছেলেটার আনন্দ দেখে অনেক খুশি হল
। কিন্তু ছেলেটা আর ফিরে আসলো না ।
গাছটা আবার একাহয়ে গেলো । একদিন
গ্রীষ্মের একটা প্রচন্ড গরমের
দিনে ছেলেটা আবার আসলো ।
গাছটা ছেলেটাকে দেখে খুব খুশি হল । গাছটা ছেলেটাকে বলল "আসো। আমার
সাথে খেলো ।" ছেলেটা বলল "আমি খুব
দুঃখি । আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি । আমি এখন
একটু সমুদ্রে ঘুড়ে আসতে চাই ।
তুমি কি আমাকে একটা নৌকাদিতে পারবে ?"
গাছটা জবাব দিলো "আমার গুড়ি তুমি নৌকা বানাতে কাজে লাগাতে পারো ।
তুমিঅনেক দূরে ঘুড়তে যেতে পারবে এবং আনন্দ
পাবে ।" তখন ছেলেটা গাছের
গুড়ি কেটে নিলো এবং একটা নৌকাবানালো ।
সে সমুদ্র ভ্রমনে চলে গেলো এবং অনেক দিন
পর্যন্ত আর ফিরলো না । ছেলেটা অনেক অনেক বছর পরআবার ফিরে আসলো ।
গাছটা ছেলেটাকে দেখে বলল "আমি খুবই
দুঃখিত বাবু । তোমাকে দেওয়ার মতো আমার
আর কিছুই নেই। তোমার জন্য কোন আপেল
নেই।" ছেলেটা বলল "আপেল
খাওয়ারমতো দাত আমার নেই ।" গাছটা বলল "আমার পিঠে চড়ার জন্য কোন গুড়ি নেই ।"
ছেলেটা বলল "আমি অনেক বুড়ো হয়ে গেছি ।
তাই তোমার পিঠে চড়তে পারবো না ।"
গাছটা দুঃখ নিয়ে বলল"তোমার জন্য আমার
কাছে আর কিছুই নেই । যা আছে , তা হল কিছু
মরমরা শিকড় ।" ছেলেটা বলল "আমার এখন বেশি কিছুই চাইনা । শুধুবিশ্রা মের
একটা জায়গা পেলেই আমি খুশি ।"
গাছটা একটু খুশি হয়ে বলল"পুরোনো গাছের
শিকড় বিশ্রামের জন্য আদর্শ জায়গা ।
আসো আমার সাথে এসে বসো এবং বিশ্রাম
নাও।" ছেলেটা গাছটার পাশে এসে বসলো । গাছটা অনেক
খুশি হলো এবং অশ্রুমাখা হাসি হাসলো ।
---/এই গল্পটা সবার জন্যই প্রয়োজন
গল্পটা প্রতিকি ।
এখানে গাছটা দিয়ে আমাদের মা-
বাবা কে বুঝানো হয়েছে । আমরা যখন ছোট ছিলাম । আমরা মা- বাবার
সাথে খেলতে পছন্দ করতাম । যখন আমরা বড়
হয়ে যাই তখনতাদেরকে ছেড়ে চলে যাই ।
আমাদের প্রয়োজনে অথবা যখন
আমরা বিপদে পরলেই শুধু তাদের
কাছে ছুটে আসি । মা-বাবা সব সময় আপনার সাথেই থাকবে । এবং আপনাকে খুশি করার
সাধ্যমত চেষ্টা করেন । আমাদের অনেকের
অবস্থাই অনেকটা গল্পের ছেলেটার মতো ।
যেখানে ছেলেটা "গাছ" টার সাথে নিষ্ঠুর
ব্যাবহার করেছে , গাছটা কে সবসময়
একটা বোঝা মনে করেছে । ভুলে যাবেন না , মা-বাবা আপনার জন্য অনেক বড় সম্পন ।
আল্লাহতালা র সর্বশেষ্ঠ উপহার আপনার জন্য
। তাদেরকে বোঝা মনেকরবেন না । আর
তাছাড়া মা- বাবা আপনারসাথে সারাজীবন
থাকবে না । তাই আসুন
আজকে থেকে প্রতিজ্ঞা করি মা- বাবাকে আর কখনো কষ্ট দিবো না ।
.
.
.
.
 নাহিদ

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৩

একটি মিনি উপন্যাস


স্টার্ট। থ্রি… টু… ওয়ান… জিরো… এ্যাকশন!

ফুশ্‌… শ… শ…!! না এটা কোনো গাড়ীর টায়ার পাংচারের শব্দ নয়। নয় কোনো প্রকৃতির ডাকে সম্পাদনকৃত ছোট কর্মের আওয়াজ। এটা আসলে মফিজের মোবাইলের রিংটোন! সকাল বেলায় এই অদ্ভুত রিংটোনের শব্দে আরামের ঘুম হারাম করে অত্যন্ত বিরক্ত সহকারে চোখ কচলাতে কচলাতে মফিজ তার ফোনটা রিসিভ করল। অপর প্রান্তের কন্ঠ শুনে মফিজ বুঝতে পারল এটা তার প্রেমিকা কুলসুমের নাম্বার। এত্ত সকালে প্রেমিকা কুলসুমের ফোন পেয়ে মফিজ খুশি না হয়ে খানিকটা আতংকিত হলো। মনে মনে ভাবল কোনো অঘটন ঘটেনি তো?
কিন্তু না কোন অঘটন নয়। অপর প্রান্ত থেকে কুলসুম মিষ্টি হেসে বলল ‘ঈদ মোবারক’।
কথাটা শুনে যেন মফিজের বাসার ছাদে ঝুলে থাকা সিলিং ফ্যানটা হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ল তার মাথায়। আজ যে ঈদ এটা মফিজের খেয়াল-ই ছিল না। (বারো মাস নামাজ-রোজার খবর না রাখলে যেমনটা হয় আর কী!) তো যা-ই হোক মফিজ তড়িঘড়ি করে কুলসুমকে বলল ‘তোমাকে ও ঈদ মোবারক এবং শুভেচ্ছা’।
কুলসুম বলল, ‘শুধু ঈদ মোবারক এবং শুভেচ্ছায় কিন্তু চলবে না’।
‘কেন তোমাকে কি ঈদে অন্যকিছু দেওয়ার কথা ছিল নাকি?’ মফিজের উত্তর।
কুলসুম বলল, ‘হ্যা’।
এবার মফিজ তার গলার স্বরটা নিচু করে অনেকটা নিরীহ আদমের মতো বলল, ‘বিশ্বাস করো, আজকের দিনে তোমাকে দেওয়ার মতো একটা ছেঁড়া দুই টাকার নোট ও আমার পকেটে নাই।’
কথাটা শুনে কুলসুম খিল খিলিয়ে হেসে জবাব দিল, ‘আরে গাধা টাকা দিতে হবে না। আজ তোমাকে আমার আব্বার সাথে দেখা করতে হবে।’
‘কেন বলতো?’ মফিজ বলল।
‘কেন আবার?’ আব্বার সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করার জন্য।’ বলল কুলসুম।
এবার মফিজ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বলল, ‘ঠিক আছে আমি সকাল ১১টার মধ্যে তোমাদের বাড়িতে আসব।’
এরপর কথামত মফিজ বেলা ১১টায় কুলসুমের বাসায় হাজির হলো।
কুলসুম মফিজকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে দিয়ে সে ভিতরের রুমে চলে গেল। যাবার আগে কুলসুম মফিজকে বলল; ‘শোনো, আমার আব্বা রুমে ঢুকেই তোমাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে। তিনি তোমার সম্পর্কে যা-ই জানতে চাইবে তুমি সবকিছু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলবে। কেমন?’
‘কেন বাড়িয়ে বলব কেন?’ মফিজের উত্তর।
কুলসুম বলল, ‘কেননা আমার আব্বা সবসময় কথা কম কাজ বেশি টাইপের লোকদেরকে একটু বেশি পছন্দ করেন,  তাই।’
কুলসুম ভেতরের রুমে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ যক্ষার রোগীর মতো কাশতে কাশতে কুলসুমের আব্বা ড্রয়িংরুমের দিকে অগ্রসর হলেন।
রুমে প্রবেশ করেই তিনি মফিজকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছো বাবা?’
‘খু… উ… ব… বেশি ভালো’ বলল মফিজ।
কুলসুমের আব্বা: তোমার ফ্যামিলিতে কে কে থাকে?
মফিজ: বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ফুফু-খালা, চাচা-চাচী…
কুলসুমের আব্বা: থাক বাবা, বাদ দাও। শুধু বলো তোমরা কয় ভাই-বোন?
মফিজ: ১০ ভাই ১১ বোন।
কুলসুমের আব্বা: তোমার বাবা কী করেন?
মফিজ: আমার বাবা একটা আধাসরকারি অফিসের বিরাট বড় ম্যানেজার।
কুলসুমের আব্বা: তুমি লেখাপড়া করেছো কোথায়?
মফিজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করছি।
কুলসুমের আব্বা: সকালে ঈদের নামাজ পড়েছো?
মফিজ: জি, জামায়াতের সাথেই চার রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করছি।
কুলসুমের আব্বা: (অবাক হয়ে) কয় রাকাত নামাজ পড়েছো?
মফিজ: কেন চার রাকাত।
কুলসুমের আব্বা: একটু ভেবে বলো?
মফিজ: জি, ভেবেই বলেছি। চার রাকাত নামাজই পড়েছি।
কুলসুমের আব্বা: বাবা, আমি তোমার পূর্বের সকল কথা মানলেও এই কথাটা কিছুতেই মানতে পারলাম না।
এবার মফিজ কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ল। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না যে ঠিক কয় রাকাত নামাজ পড়ার কথা বললে কুলসুমের আব্বা খুশি হবেন।
মফিজকে এই অবস্থায় দেখে ভেতরের দরজার আড়াল থেকে কুলসুম হাত দেখিয়ে ইশারায় ২ রাকাত নামাজ পড়ার কথা বলল।
কুলসুমের এমন ইশারায় মফিজ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত স্বরে চেঁচিয়ে বলল, ‘তোমার কি মাথা খারাপ? দেখছো না চার রাকাতের কথা বলেও তোমার বাবাকে খুশি করাতে পারছি না! যে লোক চার রাকাতে মানছে না সে লোক দুই রাকাতে সন্তুষ্ট হবে কী করে? যত্তোসব…!!’
এরপর নামাজের হিসাব মিলাতে মিলাতে মফিজ নিজের বাসায় উদ্দেশে পা বাড়াল। আর এ দিকে মফিজের চলে যাওয়ার দৃশ্যতে শুধুই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কুলসুম এবং তার আব্বা!



(সমাপ্ত)
প্রথম প্রকাশ: থেরাপি, নয়াদিগন্ত (১৫ই আগষ্ট ২০১২)

valobasa

এক:
অপু ও তপু দুই বন্ধু। তারা স্কুলের দিকে হাঁটছে। এমনিতেই মেঘের দিন তারপর আবার বৈশাখ মাস। হঠাৎ করে আকাশ কালো হয়ে এলো। কিছুক্ষন পড়েই শুরু হলো ঝড়ের ভয়াবহ হুঙ্কার। সেই হুঙ্কারে পৃথিবী কাঁপতে শুরু করল। অপু ও তপু বুঝতে পারল দিনের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই তারা দৌড়াতে শুরু করল। কিন্তু, দৌড়ালে কি হবে শুরু হয়ে গেল প্রবল ঝড়। পড়তে শুরু করল বড় বড় শিলাখন্ড। অপু ও তপু দুজনেই একটি বড় আম গাছের নিচে এসে দাঁড়াল। দিন আরো কালো হয়ে গেল। বাতাসের প্রবল ধাক্কায় আমগাছটির একটি ডাল ভেঙ্গে নিয়ে গেল। এভাবে একটানা এক ঘণ্টা তুফান চলল। তুফান থামার পর অপু ও তপু গাছের নিচ থেকে চলে এলো। তারপর আবার তারা স্কুলের দিকে হাঁটতে শুরু করল। তারা দেখতে পেল আশেপাশের সব গাছগুলো লণ্ড-ভণ্ড হয়ে গেছে। স্কুলে এসে দেখা একই অবস্থা। স্কুলে কোন ছাত্র-শিক্ষকের পাত্তা নাই। স্কুলের টিন বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। তখন তারা পুনরায় বাড়ির পথ ধরল। তপু তার বাড়ি পর্যন্ত এসে বলল, “বাড়িতে চলে যাই, আজতো আর ক্লাস হলো না।” কথাটি বলে তপু বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। অপুও আস্তে আস্তে হেটে বাড়ি চলে গেল।
দুইঃ
রাত্রিবেলা। অপু ভাবে সে পহেলা বৈশাখের দিন কি কি করেছিল।
পহেলা বৈশাখের দিন সকাল থেকেই অপু ও তপু দুজনেই ব্যস্ত কিভাবে তারা মেলায় একটা দোকান বসাবে। কারণ, তাদের এলাকার বট গাছের নিচে এক বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় একটি যাত্রাপালা হবে। যাত্রাপালার নাম “কারণ মাঝি”, লেখক আমি নিজেই। এলাকার এবং বাহিরের অনেক লোক এই মেলায় দোকান নিয়ে বসেছে। অপু তপুকে বলে উঠল, “বাইরের লোক এহানে দোহান দেবে, আর আমরা গেরামের ছেলে হয়ে দোহান দিতে পারুমনা, এইটা কি অয়?” তারা দুইজন অনেক বুদ্ধি-সুদ্ধি করে একটি পান্তা ভাতের দোকান খুলে বসল।
কবিমন বলে উঠেঃ
“পান্তা ভাত আর ইলিশ ভাঁজা,
একসাথে খেতে ভারী মজা।
যদি দাম হয় আরও কম,
খাওয়া চলবে হরদম।”
অনেকেই বিশ টাকা দিয়ে তাদের দোকান থেকে পেটপুরে পান্তাভাত খেয়ে গেল। সারাদিন তারা প্রায় দুইশো টাকার মত লাভ করল। তারা ভাবল এই টাকার কিছু অংশ দিয়ে তারা যাত্রাপালা দেখবে। তারা “কারণ মাঝি ” যাত্রা পালার কিছু কাহিনী শুনেছে। কিভাবে কারণ মাঝিকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তারপর তাকে কি কারণে নরকের নদী পারাপারের মাঝি বানানো হয়েছিল। নাটকটিতে কারণ মাঝির কিছু রোমান্সের কাহিনীও আছে। তারা ঠিক করল নাটক দেখের পর বাকি যা টাকা থাকবে তা তারা দুজনে ভাগ করা নেবে। কিন্তু, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সন্ধ্যার দিকে আকাশে মেঘ জমে গেল। যাত্রাপালার পেন্ডেলের ভেতর দর্শকরা সবাই বসল। হঠাৎ সেই কালো মেঘে সারা আকাশ ছেয়ে গেল। গুড়ুম গুড়ুম শব্দে আকাশে বাজ পড়তে শুরু করল। সাথে শিলা বৃষ্টি। সবাই মেঘের এই তর্জন গর্জন দেখা পেন্ডেল ছেড়ে দৌড় দিলো। হঠাৎ প্রবল একটা বাতাসের ধাক্কায় মঞ্চের উপরের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেল। শুরু হলো প্রবল কাল বৈশাখী ঝড়। অপু, তপু ভিজে চুপসে গেল। তারা অনেক কষ্টে বাড়ি পৌছাল।
তিনঃ
পহেলা বৈশাখের সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছিল কালো বৈশাখী ঝড়। তারপর থেকে প্রতি দিনই ঝড় হয়। প্রায়ই বজ্রপাত হয়। তাই, সবাই ঝড়ের আভাস পেলেই ঘরে ফিরে যায়। অপু তপু প্রতিদিনই মাঠে গোল্লাছুট খেলতে যায়। তারা দুজনেই পড়ালেখায় খুব কাঁচা। সারাদিন খেলায় মত্ত থাকে। একদিন তারা খেলাধুলা করে বাড়ির দিকে ফিরছিল। তারা একটি প্রকাণ্ড ঘুড়ি আকাশে ভাসিয়ে হাটতে থাকছিল। এমন সময় তারা অনেক দুর থেকে ভেসে আসা শো শো শব্দ শুনতে পেল। তারা তখন বুঝতে পারেনি এটা কিসের পূর্বাভাস। তারা তাদের ঘুরিতে প্রচণ্ড টান অনুভব করল। দূর থেকে ভেসে আসা শব্দটি আরো নিকটবর্তী হতে শুরু করল। তখন তারা বুঝতে পারল বাতাস বেশ জোড়ে বইছে। এই বাতাসে ঘুড়ি নিচে নামানো সম্ভব নয়। তখন তপু অপুর হাত থেকে ঘুড়ির নাটাইটি নিলো। শো শো শব্দটি একেবারে নিকটবর্তী হল। আকাশ কলো মেঘে ছেয়ে গেল। অপু বাড়ির দিকে দৌড় শুরু করল। কিন্তু, তপু! আর বাড়ির দিকে দৌড় দিতে পারলনা। কারণ, ঘুড়ির রশিটি ছিলো খুব শক্ত সুতোর। সেই সুতো তপু তার হাতে শক্ত ভাবে পেঁচিয়ে নিয়েছিল। বাতাসে ছিলো প্রবল টান। সেই বাতাস একটি কড়ই গাছকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ঘুড়ির সাথে বাতাস তপুকেও উড়িয়ে নিয়ে গেল। সেই বাতাস তপুকে আর ফিরিয়ে দিয়ে গেলনা।
চারঃ
অনেক বছর হয়ে গেল তপু মারা গেছে। তপু মারা যাওয়ার পর অপু আর কোন সময় খেলাধূলা নিয়ে মত্ত হয়নি। অপু তখন থেকেই পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেছিল। অপু এখন পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্সে পড়তেছে। যখনই বৈশাখ মাস আসে তখনই অপুর মনে পরে যায় তার বন্ধু তপুর কথা। তখন তার মনে এসে যায় সেই চিরচেনা, “আকাশে জমেছে মেঘ” ।

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

লোডশেডিংয়ের টানে, কাছে আনে!

লোডশেডিংয়ের টানে, কাছে আনে!



মেয়েটির নাম শোভা। থাকে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে। দেখতে যতটা সুন্দরী, তার চাইতে বেশি মনে হয় অহংকারী! আসলে মেয়েটিকে এভাবে ঠাস করে অহংকারী বলে ফেলাটা হয়তো আমার ঠিক হয়নি। কিন্তু কী করব বলেন? প্রথম দেখার পর থেকে শোভার সাথে কিঞ্চিত কথা বলার কত্ত ট্রাই করলাম, অথচ সে আমাকে কোনো পাত্তাই দিলো না। আরে বাবা, আমার চেহারা-সুরত না হয় সিনেমার নায়কের মতো না হয়ে অনেকটা ভিলেনের মতো হয়েছে। তাই বলে ভিলেন চেহারার লোকেরা কি মানুষ না? তারা কি কারো সাথে মনখুলে কথাও বলতে পারবে না? এগুলো ভাবতে ভাবতে প্রায়ই আমার মনটা উদাস হয়ে যায়।
দেখতে দেখতেই চলে আসলো গরমকাল। শীতের পর যেমন গরম আসে, ঠিক তেমনি গরম আসলেই লোডশেডিং আসবে এটাই স্বাভাবিক! আর তাই তো গরম আসতে না আসতেই লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে গেল কয়েকগুণ। এখন দিনের ১২ ঘন্টা (কখনো বা তারও বেশি সময়) বাসাবাড়িতে কারেন্ট থাকে না। এ তো গেল শহরের কথা, গ্রামাঞ্চলে কী অবস্তা তা একমাত্র গ্রামবাসীরই মালুম! তবে যেখানেই যত ঘন্টা লোডশেডিং হোক না কেন, এ নিয়ে দেশবাসী ওরফে সাধারণ জনগণের কোনো মাথা ব্যথা নেই। সকলের দাবি একটাই; আর তা হলো- কারেন্ট তো যায় না, মাঝে-মধ্যে আসে আর কি! তবে এ নিয়ে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই তা-ও কিন্তু নয়। আমার এক বন্ধু প্রায়ই বলে, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের কোনো উন্নয়ন না হইলেও লোডশেডিংয়ের উন্নয়ন হইছে ব্যাপক হারে! তাই তো রাত আড়াইটার সময় ঘুম ভাঙলেও দেখি লোডশেডিং চলছে। আবার আরেক বন্ধুকে বলতে শুনি, সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌছাতে না পারলেও হারিকেনের আলো পৌছে দিয়েছে খুব সহজেই! পরের কথা ছেড়ে এবার নিজের কথায় আসি। ছোটবেলা থেকেই লোডশেডিং আমার খুব প্রিয় একটা জিনিসের নাম ছিল। কারণ একমাত্র লোডশেডিংয়ের অজুহাত দেখিয়েই স্কুলের হোমওয়ার্ক বা পড়ালেখা নিয়ে ফাঁকিবাজি করতে পারতাম। পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা, দাঁতে ব্যথা এসবের অজুহাতে হোমওয়ার্ক না করলে স্যারদের বেত্রাঘাত থেকে মুক্তি পাওয়াটা বেশ মুশকিল হয়ে যেতো। কিন্তু লোডশেডিয়ের অজুহাত দেখালে এক সেকেন্ডেই সব কিচ্ছা খতম হয়ে যেতো। সবাই বিশ্বাস করত যে ঘটনা সইত্য! কারণ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে নাই বা লোডশেডিং সম্পর্কে সাধারণ নলেজ নাই এমন ইনসান এই বাংলার মাটিতে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না!
আমার এলাকায় মনে হয় গরমের মাত্রাটা অন্যান্য এলাকার চাইতে একটু বেশি। আর তাই তো সন্ধার পর লোডশেডিং হলে লোকজনকে হাতপাখা নিয়ে বাতাস করতে করতে রাস্তায় নামতে দেখি। মাঝে মধ্যে আমারও ইচ্ছে করে তাদের সাথে যোগ দিতে, কিন্তু শরমের কারণে রাস্তায় আর নামা হয় না। তবে রাস্তায় না নামলেও লোডশেডিং হলে ঘরে বসে থাকতে পারি না। আর তাই বাতাস এবং মশার কামড় খেতে রওনা দেই বাড়ির ছাদের দিকে। আমার ছাদে যাওয়ার পেছনে অবশ্য আরো একটা কারণ আছে। আর তা হলো- যতবারই লোডশেডিং হয় ততবারই শোভাকে ছাদের দিকে রওনা হতে দেখা যায়। আর শোভা একা একা ছাদে গেলে আমি ঘরের মধ্যে একলা বসে থাকব নাকি? তাই আমিও তার পেছন পেছন ছাদে চলে যাই। তবে একসাথে ছাদে গেলেও শোভা কখনোই নিজ থেকে আমার সাথে কোনো কথা বলে না। আবার আমি তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে সে খুব নিখুঁতভাবেই আমার কথাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। এভাবে এড়িয়ে যেতে যেতে একদিন, দুইদিন, তিনদিন করে সপ্তম দিনের মাথায় সে নিজ থেকেই আমার সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে এলো। এ দিন অন্যান্য দিনের চেয়ে গরমের মাত্রাটা মনে হয় একটু বেশি ছিল। আমি লোডশেডিংয়ের সময় ছাদে উঠে দেখলাম শোভা ছাদের মাঝখানে একটা শীতলপাটি বিছিয়ে বসে আছে। তখন গরমের কারণে শোভা তার ওড়না দিয়ে নিজের শরীরে বাতাস করছিল। কিন্তু এতে কি আর বাতাস লাগে? এ দিকে আমার হাতে ছিল একটা তালপাতার পাখা। এটি দেখে শোভা আমাকে মিষ্টি সুরে কাছে ডাকল। আমাকে বলল তার পাশে বসার জন্য। আমি বসার পর সে আমার হাতের পাখাটা তার হাতে দিতে বলল। আমি দিয়ে দিলাম। এর পর এটা দিয়ে সে বাতাস করতে লাগল দুজনার দিকে। সুযোগ পেয়ে আমিও তার হাতের বাতাস (সাথে মশার কামড়) খাচ্ছি এবং গল্প করে যাচ্ছি শোভার সাথে। এভাবে গল্প করতে করতে আমরা দুজন একসময় দুজনার ভালো বন্ধুতে পরিণত হলাম।
যেহেতু লোডশেডিং এখন প্রতিদিনকার সঙ্গী, তাই রুটিন করে আমরাও প্রতিদিন ছাদে উঠে গল্প করতে লাগলাম। আমাদের মাঝের বন্ধুত্বের বন্ধনটা হতে লাগল আরো গভীর থেকে গভীর। আর এর সবটাই সম্ভব হয়েছে একমাত্র লোডশেডিংয়ের কল্যানে!
প্রথম প্রকাশ: থেরাপি, নয়াদিগন্ত (১৪-০৩-২০১২)